মহান বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তাঁর সম্মানে আজ আমরা আইনস্টাইনীয় vocabulary শিখবো।ইংরেজি প্রত্যেকটা বর্ণের বিপরীতে উনার ব্যাখ্যা অতি চমকপ্রদ।
A- Albert Einstein, ১৯১৫ সালের নভেম্বরে আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত ফিল্ড ইক্যুয়েশন প্রুসিয়ান একাডেমীতে জমা দেন। যা পরে জেনারেল রিলেটিভিটি বা সাধারণ আপেক্ষিকতা বিপ্লবের জন্ম দেয়।
B- Black Holes, আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুমান করে যে ভরের কারণে মহাশূন্যের জ্যামিতির পরিবর্তন হয়। আর অনেক বেশি ভরসমৃদ্ধ বস্তু ব্ল্যাকহোলের বাকৃষ্ণগহ্বরের জন্ম দিতে পারে।
C- Clocks, ঘড়ি (বা সময়) ভিন্ন ভিন্ন মহাকর্ষীয় অবস্থার জন্য ভিন্ন ভিন্ন গতিতে চলে- এটা হচ্ছে বিশেষ আপেক্ষিকতার মূল প্রতিপাদ্য।
D- Dark Matter, অদেখা এই “বস্তু” বা কণা মহাবিশ্বে ভরপুর বলে ধারণা করা হয়, যা শুধু এর মহাকর্ষীয় প্রভাব দ্বারা এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
E- “E=mc2” জানা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বৈপ্লবিক সমীকরণ। এই সমীকরণ বলে ভর আর শক্তি সমানুপাতিক, আর এই সমীকরণের উপর ভিত্তি করে সাধারণ আপেক্ষিকতা গড়ে উঠেছে।
F- Frame Dragging, মহাশূন্য (space) নমনীয় আর প্রসারণশীল আর এতে অবস্থিত কণারা শক্তি আদান-প্রদান করে। শূন্য ঘূর্ণনরত কণাদের কিছু শক্তি শোষণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবী তার কক্ষপথের শূন্যকে (space) টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
G- Gravity, গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ ছিল আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার হারানো ধন। ভরের কারণে স্থান-কালের বক্রতা ব্যাখা করতে আইনস্টাইনের একযুগ লেগে যায়।
H- Hubble Space Telescope, মার্চ ২০১৫ তে হাবল অনেক দূরের সুপারনোভার একটি ছবি তোলে, ছবিতে একই সুপারনোভা চারটি জায়গায় দেখা যায় (ছবিতে), একে Einstein’s Cross বলা হয়। এটা প্রমাণ করে গ্র্যাভিটির প্রভাবে আলো কিভাবে বেঁকে যায়। প্রথমবার এটি প্রমাণিত হয় স্যার আর্থার এস এডিংটনের হাতে, ১৯১৯ সালে।
I- Imagination, আইনস্টাইন বলেন Imagination “জ্ঞানের চাইতেও বেশী প্রয়োজনীয়”। সত্যিই, Imagination ছাড়া আপেক্ষিকতার অনেক ধারণাই সম্ভব ছিল না, আর সেই ধারণাগুলো এখন বাস্তব হিসেবে প্রমাণিত।
J- Jet, পদার্থবিজ্ঞানে Jet দুই রূপে আসে, Particle Jets- অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কণার স্প্রে যা আসে উচ্চ শক্তির সংঘর্ষ থেকে, যেটা স্পেশাল রিলেটিভিটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। আর Astrophysical Jets- যা ব্ল্যাকহোল আর accretion disks থেকে আসে, আর একে ব্যাখ্যা করে জেনারেল রিলেটিভিটি।
K- Kip Thorne, কিপ থর্ন বিশ্বের গণ্য রিলেটিভিটি বিশেষজ্ঞ, তিনি ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলারের বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন, আর সেখানে তিনি কৃষ্ণগহ্বরের পাশে থাকলে নভোচারীদের টাইম ডাইলেশনের প্রভাবে হওয়া বয়সের বাড়ার হারের পরিবর্তনের ব্যাপারটি দেখান, যা আইনস্টাইন বলে গিয়েছিলেন।
L- LIGO, LIGO হচ্ছে Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করার গবেষণাগার, এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার একটা প্রস্তাব। ২০১৫ সালে তারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করেন আর ২০১৬ সালে তারা এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
M- Mathematics, অ-ইউক্লীডিয় বক্রতার জ্যামিতি অনেক বছর ধরেই বিতর্কের বিষয় ছিল, ১৮০০ সালের আগে গণিতকে খুব কম মানুষই প্রাধান্য দিতেন। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা গণিতের বাহ্যিক প্রয়োগ এনে দেয়।
N- Navigation, বিশেষ এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা ছাড়া উপগ্রহের জিপিএস সিস্টেমের সাথে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান অসম্ভব হতো।
O- Orbit– Mercury বা বুধের কক্ষপথের হিসাব নিউটনীয় পদার্থবিদ্যার হিসাবের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, তবে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি বুধের কক্ষপথের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে পারে।
P- Pioneer Anomaly– যখন পাইওনিয়ার মহাকাশযান হঠাৎ করে থেমে যাওয়া শুরু করে তখন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়, পরে দেখা গেলো পাইওনিয়ারের ভেতর থাকা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির তাপের কারণে এটির গতি কমে গিয়েছিলো।
Q- Quantum Mechanics– পদার্থবিদ্যার আরেক বড় তত্ত্ব। যদিও সাধারণ আপেক্ষিকতার সাথে কোয়ান্টাম খুব একটা খাপ খায় না, তারপরও মনে করা হয় এই দুই তত্ত্ব একীভূত করতে পারলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অনেকখানি এগিয়ে যাবে, আর এই চেষ্টা চলছে এখনো।
R- Roof, আইনস্টাইন একবার এক লোককে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে একটা ময়লার স্তুপে পড়তে দেখেন, পরে সেই লোক জানায়, সে পড়ার সময় মহাকর্ষের কোনো শক্তি অনুভব করতে পারছিলো না। এই কথোপকথন আর পরবর্তী পরীক্ষানিরীক্ষা আইনস্টাইনকে মহাকর্ষের নিউটনীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য করে।
S- Space Time, স্থান-কাল আলাদা কিছু নয়, বরং স্থান আর কালের একটি অবিচ্ছেদ্য মাত্রা। John Archiblad Wheeler সহজ করে সাধারণ আপেক্ষিকতার সারমর্ম হিসেবে বলেন “স্থান বস্তুকে বলে কোন পথে যেতে হবে” আর “কণা স্থানকে বলে কিভাবে বাঁকতে হবে”।
T- Try, আইনস্টাইনের অভ্যাস ছিল আগের করা কাজগুলোকে আবারো পরীক্ষা করে দেখা। নভেম্বর ১৯১৫তে তিনি এক সপ্তাহে ৪টি আলাদা পেপার জমা দেন, এর মধ্যে শেষ পেপারটি বুধের কক্ষপথের সঠিক হিসাব দেয়।
U- Unified Field Theory– কথাটির প্রচলন আইনস্টাইন নিজে শুরু করেন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা আর তড়িৎচৌম্বকত্বের একীভূতকরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে বুঝাতে। বর্তমানে এই তত্ত্বের খোঁজ চলছে প্রাথমিক কণা আর মৌলিক বলের সম্পর্ককে বুঝাতে, যাকে বলা হচ্ছে- The Theory of Everything।
V- Verification– জ্যোতির্বিদ স্যার আর্থার এডিংটন ১৯১৯ সালে পশ্চিম আফ্রিকার প্রিঞ্চিপে দ্বীপে সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের পিছনে থাকা নক্ষত্রের আলোর বক্রতা সনাক্ত করেন, যা আইনস্টাইনের তত্ত্বের হিসাবের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়, আর এই পর্যবেক্ষণ আইনস্টাইনকে নক্ষত্রের কাতারে নিয়ে যায়, বোঝেনই তো, রকস্টার টাইপ!
W- Wormholes, সাধারণ আপেক্ষিকতার আরেকটি প্রতিপাদ্য, যা বলে স্থান বেঁকে গিয়ে মহাবিশ্বের অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার সহজ পথ করে দিতে পারে, যেখানে সাধারণত যেতে কয়েকশো কোটি বছর বা মহাবিশ্বে দূরত্বের মাপকাঠি কয়েকশো “আলোকবর্ষ” লেগে যাবে। আর এ কারণে অনেকে বলেন ওয়ার্মহোল বা কীটগহ্বর আমাদের অন্য কোনো সময়েও নিয়ে যেতে পারে।
X- X ray Astronomy, আলোক সংবেদী টেলিস্কোপের চেয়ে এক্স-রে টেলিস্কোপ মহাবিশ্ব দেখার জন্য বেশি কার্যকর, কারণ নিউট্রন নক্ষত্র আর কৃষ্ণগহ্বরের মত চরম মহাকর্ষীয় শক্তিসম্পন্ন এলাকাতেও এক্স-রে পাওয়া যায়।
Y- Youth, আইনস্টাইন বলেন, তারুণ্য হচ্ছে আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়। তিনি লিখেছিলেন- “মহান আবিষ্কার শুধু মানুষের তরুণ বয়সেই আসে। পরে সে বুড়ো হয়ে যায়, অভিজ্ঞ হয়ে যায়, জনপ্রিয় আর বোকাও হয়ে যায়।“
Z- Zee, Anthony. এন্থনী যির বই “Einstein’s Gravity in a Nutshell” এর প্রথম লাইনে তিনি লিখেন- “আপেক্ষিকতা একটা মোহনীয় ধারণা, যেখানে আপনি যে কোনো কারো মতই ভালো, আর যে কোনো কেউ আপনার মতই ভালো”।
এই লিখাটা মূলত আমার না। এতো ভালো লিখা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারিনি। মূল লিখার লিঙ্ক হল
বিজ্ঞানযাত্রা ।