মহাকাশ নিয়ে করা মুভিগুলোর মধ্যে আমার প্রিয় মুভি, "দ্যা মারশিয়ান", "ইন্টারস্টেল্লার", "গ্রেভিটি"। দ্যা মারশিয়ান" মুভিটা অনেক ভালো লাগছে, কারন এটার সহজ বিজ্ঞান বুজতে খুব বেশী কষ্ট হয় নাই, আর মুভির শুটিং লোকেশন, কাহিনী সবই চমৎকার। তাই সবার সাথে রিভিউটা শেয়ার করলাম।
Ares 3 মিশন, মঙ্গলে অবস্থানরত ৬ জনের একটা টীম – যাদের মধ্যে দুইজন মিলিটারি (একজনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ভালো, আরেকজনের সামরিক টেকনিক্যাল জ্ঞান ভালো), একজন রসায়নবিদ, একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী, একজন যোগাযোগ ব্যবস্থায় দক্ষ, আরেকজন খুব সম্ভবত পদার্থবিদ। গবেষণা চলাকালে ভয়াবহ ঝড়ের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে মিশন ত্যাগ করে রওনা দিতে হয় পৃথিবীর দিকে। কিন্তু সেই ঝড়েই উদ্ভিদবিজ্ঞানীটি পেছনে রয়ে যায়। সবার ধারণা, সে মৃত। কিন্তু আসলে সেই উদ্ভিদবিজ্ঞানীটি আমাদের মঙ্গলবাসী, The Martian.
খুব জলদি হলেও পরবর্তী উদ্ধার মিশন আসতে আসতে লাগবে ৪ বছর। এদিকে এন্টেনা ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই, আর আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে – এতোদিনের খাবারও নেই। টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নভোচারী উদ্ভিদবিজ্ঞানী Mark Watney কে বেঁচে থাকতে হবে এমন এক গ্রহে যেখানে আর কোনো প্রাণ নেই। তাকে খাবার জন্মাতে হবে এমন এক গ্রহে, যেখানে কিছুই জন্মায় না।
মুভিটাকে স্পেস মুভি বলতে পারছি না, কারণ স্পেসের চেয়ে মঙ্গলেই প্রায় পুরো কাহিনীটুকু। অবশ্য মহাশূন্যের বেশ কিছু দৃশ্য আছে, আর সেই কারণে যদি এটাকে স্পেস মুভির জনরাতে ফেলতেই হয়, তাহলে এটাও বলবো – এখন পর্যন্ত বানানো সবচেয়ে চমৎকার স্পেস মুভিগুলোর মধ্যে The Martian অবশ্যই স্থান করে নেবে। এই সিনেমাটা বিজ্ঞান নিয়ে অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মানুষদের ক্ষুধা যেমন মেটাবে, তেমনি বিজ্ঞানের চেয়ে মুভির কাহিনী আর আবেগের প্রতি আগ্রহী দর্শকের চাহিদাও পূরণ করবে এটা। আমি মোটামুটি দুই দলেই পড়ি। এবং বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটার বিজ্ঞানকে যতটুকু সম্ভব নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এমনটাই প্রত্যাশিত, কারণ এটা যে বই থেকে নিয়ে বানানো হয়েছে, তার লেখক Andy Weir এর জন্ম পার্টিক্যাল ফিজিসিস্ট (কণা পদার্থবিদ) বাবা আর ইলেকট্রিক্যাল ইনজিনিয়ার মায়ের ঘরে। আর তিনি নিজে ১৫ বছর বয়স থেকে প্রফেশনালি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর কাজ করেছেন। অবশ্য উনি অনার্স গ্র্যাজুয়েশন করার আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর টেকনিক্যাল ডিটেইলসগুলো নিখুঁত হবার প্রধান কারণ হচ্ছে, মুভিটির পরামর্শদাতা ছিলো খোদ NASA.
এই মুভিটা যে শুধু ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছে তাই নয়, মঙ্গলে আমাদের অতীত যাত্রাগুলোকেও টান মেরে নিয়ে এসেছে। ট্রেলারে সবাই দেখেছেন যে মার্ক ওয়াটনি পৃথিবীতে নাসার সাথে যোগাযোগ করতে পারে শেষ পর্যন্ত, এবং সেজন্যেই তাকে উদ্ধারের জন্য মিশন পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সে কিভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলো, জানেন? তার কমিউনিকেশন টাওয়ার তো ঝড়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো! এটুকু বলার লোভ সামলাতে পারছি না। তার হঠাৎ মনে পড়ে যে, অতীতে (১৯৯৭ সালে) নাসা একটা প্রোব পাঠিয়েছিলো মঙ্গলে; যেটার নাম ছিলো Pathfinder. আর সেটা এখন মঙ্গলের ধূলিবালির নিচে। সে গিয়ে সেটাকে উদ্ধার করে, এবং সেটার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে নিজের মেসেজ পাঠায় নাসাতে। মুভিতে দেখানো Pathfinder এর রেপ্লিকা বাস্তবের সাথে একদম হুবহু মিল!
এই Pathfinder টা দেখা মাত্র মনের ভেতরটা কেমন যে করে উঠলো। একসাথে কত রকম আবেগ যে মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে গেলো। এটার মধ্যে একটা ল্যান্ডার ছিলো, যেটা মঙ্গলে গিয়ে নেমেছিলো, এরপর তিনদিক থেকে ঢাকনার মত খুলে গিয়ে ভেতরের rover টাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলো। এরপর rover টা ঘুরে ঘুরে বেশ কিছু গবেষণা করেছিলো। সেই ল্যান্ডিং এর জায়গাটাকে, মানে ল্যান্ডারটা যেখানে আছে, সেই জায়গার নাম রাখা হয়েছিলো আমার আদর্শের নামে – Carl SaganMemorial Station. সেই pathfinder খোঁজার জন্য মার্ক ওয়াটনি গিয়েছিলো সেই মেমোরিয়াল স্টেশনে, বালির নিচ থেকে খুঁড়ে খুঁড়ে বের করেছিলো জিনিসটাকে।
এই নিয়ে দুটো সিনেমাতে ভিনগ্রহে অভিনেতা Matt Damon কে রেখে আসা হলো ভিন্ন গ্রহে। আরেকটা নিশ্চয়ই দেখা আছে, Interstellar. বেশ মজার ব্যাপার! দুটো সিনেমার মধ্যে তুলনা করতে গেলে বলতে হয়, এটার সায়েন্স আরো কম জটিল, কিন্তু আরো বেশি পাকাপোক্ত, কারণ এটা এমন বিষয় নিয়ে কাজ করেছে যার ব্যাপারে আসলে আমরা অনেক কিছুই জানি। অভিনেত্রী Jessica Chastain, তিনিও ইন্টারস্টেলারে ছিলেন, কিন্তু বেচারিকে ওখানে স্পেসস্যুট পরতে দেয়া হয়নি, এখানে সে একদম মিশন Ares 3 এর লিডার।
আর গ্র্যাভিটিতে যে অতিরিক্ত নাটকীয়তা নিয়ে আসা হয়েছিলো, এবং বেশ কিছু ভুলভাল বিজ্ঞানও দেখানো হয়েছিলো; দ্যা মার্শানে এমন কিছু নেই। ক্লাইম্যাক্স অবশ্যই খুবই চমৎকার, এবং সেটা কাহিনীর সাথে এমন সুন্দর করে মানিয়ে গেছে যে বলার মত না। মানে, ক্লাইম্যাক্স অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেয়ার মত, এবং এমনটা হবার সম্ভাবনা মোটেও শূন্যের কাছাকাছি না। গ্র্যাভিটির ক্লাইম্যাক্স বাস্তবসম্মত না, এই মুভিতে বাস্তবসম্মত, এটুকুই বলতে চাইছি। মানে, এমনও মনে হচ্ছিলো যে, এটার কাছাকাছি কোনো বাস্তব ঘটনা নিয়ে একসময় মুভি বানানো হতে পারে।
Post a Comment
1 comments:
Thanks for postiing this
Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.