সম্পতি বাংলাদেশ গিনেস বুক অব
ওয়াল্ড রেকর্ডে নতুন এক রেকর্ড যোগ করেছে। “লঙ্গেস্ট সিঙ্গেল লাইন অফ বাইসাইকেল
মুভমেন্ট” ক্যাটাগরিতে এই রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশের সাইক্লিস্ট গ্রুপ বিডি
সাইক্লিস্ট। গ্রুপে মোট ১১৮৬ জন আরোহী অংশ নিয়েছে এই রেকর্ড গড়তে। বর্তমানে সাইকেল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গড়ে
উঠেছে বিভিন্ন সাইক্লিস্ট গ্রুপ, বিভিন্ন সমাজ সচেতনতামূলক কাজেও এই গ্রুপ গুলো
অংশগ্রহণ করছে।
 |
গিনেস বুক রেকর্ড |
বাইসাইকেল বর্তমানে সহজ,
জালানিমুক্ত এবং পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিনা খরচে দ্রুত
পথচলা ও শারিরিক ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সাইকেলের কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মত বড় বড় মেগা সিটি
গুলোতে ও সাইকেলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকার চেয়ে অল্প
সময়ে সাইকেলে গন্তব্যস্থলে পোঁছানোর কারনে
সাইকেল এখন কর্পোরেট লোকদের ও পছন্দ।
কিন্তু কখনোই কি ভেবেছেন, এই
সাইকেল কিভাবে এলো? কাদের অবদান আছে সাইকেলকে
আজকের পর্যায়ে আনতে। বিশেষ করে দুই
চাকার উপর ভর করে শারীরিক ভারসাম্য ঠিক রেখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা, কিভাবে এলো
ধারণটা? আজকে লিখবো সাইকেলের সেই অজানা ইতিহাস নিয়ে।
ইংরেজি শব্দ বাই সাইকেলের বাংলা
অর্থ হল দিচক্রযান। ১৮৪৭ সালে সর্বপ্রথম ফরাসী একটি প্রকাশনায় শব্দটি ব্যবহার করে।
দুই চাকার একটি অজ্ঞাত বাহন কে পরিচয় করিয়ে দিতে শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মূলত পা
দ্বারা চালিত দুই চাকার বাহনকেই বাই সাইকেল বলা হয়, যেখানে মেশিনের কোন ব্যবহার
নেই। তবে বর্তমানে কিছু সাইকেলে মেশিনের ব্যবহার দেখা যায়।
 |
প্রথম সাইকেল |
সাইকেলের আবিষ্কারের কৃতিত্ব
নিয়ে দাবী অনেকের। ফরাসীরা দাবী করে তারাই সর্বপ্রথম সাইকেল আবিষ্কার করেছে। এদিকে
জার্মান, স্কটল্যান্ড, ইংরেজরা ও দাবী করছে যে তারাই সর্বপ্রথম সাইকেল আবিষ্কার
করেছে। আমেরিকানরা ও দাবী করে যে সাইকেল তারাই আবিষ্কার করেছে। তবে ইতিহাস সাক্ষী
দিচ্ছে যে মানুষ আবিষ্কৃত প্রথম দুই চাকার বাহন আবিষ্কার করেন জার্মানির কার্ল বন
ড্যারন নামে এক ব্যাক্তি। ১৮১৭ সালে তিনি তার আবিষ্কৃত বাই সাইকেল সর্বপ্রথম
জনসম্মুখে আনেন জার্মানির শহর ম্যানহেম এ।পরে ১৮১৮ সালে ফ্রান্সের প্যারিস এ ও
তিনি তার বাই সাইকেলের প্রদর্শনী দেখান। উনার বাইসাইকেল আজকের দিনের বাইসাইকেলের
মত না। তিনি কাঠের ফ্রেমের সাথে কাঠের দুটি চাকা লাগিয়ে এক ধরনের বাহন তৈরি
করেছেন, ছিল না কোন প্যাডেল বা কোন পুলার। পায়ের সাহায্যে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে
এগিয়ে যাওয়াই ছিলো ওই বাইসাইকেলর মুল কার্যপ্রণালী। এটি পুরোপুরি বাইসাইকেলের
মর্যাদা পায়নি। ইংলিশরা মজা করে একে বলতো ডেন্ডি হর্স।
সর্বপ্রথম যান্ত্রিক
বাইসাইকেলের পরিচয় করিয়ে দেন স্কটল্যান্ডের ক্রিকপ্যাট্টিক ম্যাকমিলান ১৮৩৯ সালে।
১৮৬০ সালের প্রথম দিকে ফরাসী পিতা পুত্র পিয়েরে ও আরনেস্ট মাইকক্স সর্বপ্রথম পায়ে
চালিত বাইসাইকেল আবিষ্কার করেন। তাদের সাইকেলের সামনের চাকাটা ছিলো বড়। সামনের
চাকার সাথে প্যাডেল লাগানো ছিলো। তবে ছিলো না কোন চেইন। লোহার তৈরি চাকার কারনে
রাস্তায় চলার সময় ঝনঝন শব্দ করতো।
এরপর
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের সাইকেল তৈরি হতে থাকে। কারো সামনের চাকা বড়, কারো পিছনের চাকা বড়, কারো বসার জায়গা নিচে আবার
কারো বসার জায়গা অনেক উপরে। বিভিন্ন ধরনের সাইকেল আবিষ্কার হলেও সাইকেলগুলো চালানো
সহজ হচ্ছিল না। ওই সময় কিছু কিছু সাইকেলের চাকা ২০ ফুট পর্যন্ত উঁচু ছিল। ১৮৮০
সালে সর্বপ্রথম সাইকেলের দুই চাকা সমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় এবং চেইন ও টায়ার
লাগানো হয়। তবে টায়ারে হাওয়া ভরা থাকতো না। মেয়েরা যাতে স্কার্ট পরে সাইকেল চালাতে
পারে সেজন্য এই সময় তৈরি করা হয় ভিন্ন এক ধরনের সাইকেল। ১৮৮৮ সালে টায়ারে
সর্বপ্রথম হাওয়া ঢুকানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে সাইকেলের আধুনিক যুগের সূচনা
হয়।
ফ্রান্সের পিয়ের মিশো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ের লালেমেন্ট- এই দু’জন প্রথম প্যাডেল চালিত
সাইকেল আবিষ্কার করেন। তবে দু’জনের কে আসল উদ্ভাবক তা
কিন্তু আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। যদিও ১৮৬৬ সালের ২০ নভেম্বর পিয়ের লালেমেন্ট
সাইকেল উদ্ভাবনের জন্য তাঁর দেশে স্বীকৃতি লাভ করেন।সেই হিসেবেই বাইসাইকেলের
আবিষ্কারের সময় ধরা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে ও গ্রামে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বেশী থাকলে ও ইদানীং শহরের কিশোর,
যুবকদের কাছে সাইকেলের জনপ্রিয়তা অনেক। পৃথিবীর অনেক দেশে সাইকেলের জনপ্রিয়তা অনেক
বেশী। বিশেষ করে চীনে। আমাদের দেশে ঢাকা শহরে ও সাইকেলের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তাই
সাইক্লিস্ট গ্রুপ গুলো আলাদা সাইকেল লেন এর ব্যাপারে ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে
দাবী জানিয়েছেন।