নূরদা, আমায় একটু হেল্প করবেন? আমি
যারপর নাই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি পেছন থেকে ডেকে বলা মেয়েটার দিকে। আগে কখনো দেখেছি
বলে মনে করতে পারছি না। তার ও তো আমার নাম জানার কথা না। সবচেয়ে বড় কথা আমার মত গর্দবের
কাছে তো কোন মেয়ের হেল্প চাওয়ার কথা না, যে প্রত্যেক সেমিষ্টারে একটা দুটা বিষয়ে ফেল
করে করে ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের ব্ল্যাক লিস্টে চলে গেছি। কোথাও একটা ভুল
হচ্ছে...বুঝতে পারছি না। স্তম্ভিত ফিরে পেলাম মেয়েটার কথায়।
-কি ব্যাপার, বোকার মত
হ্যাঁ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কতক্ষন ধরে আপনাকে পিছন থেকে ডাকছি। ও আচ্ছা আমার
পরিচয়টা দিয়ে নেই। আমি অর্পিতা, কম্পিউটার সায়েন্স, মানে আপনার ডিপার্টমেন্ট এ
ভর্তি হয়েছি, ফাস্ট সেমিষ্টার।
আমার এক কাজিন আছে
আপনাদের ব্যাচ এ। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম আপনি নাকি কম্পিউটার খুব ভালো বোঝেন।
সে আরো বলেছিল, আপনি নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলেন না।
মেয়েটা এক নাগাড়ে কথা
বলেই যাচ্ছে। কথার প্রতি আমার তেমন মনযোগ ছিলো না। আমি তাকিয়ে আছি মেয়েটির দিকে।
তার চেহারাটা এতো নিষ্পাপ দেখাচ্ছিলো, এ যেন রবীন্দ্রনাথের বর্ণনাকে ও হার
মানিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা তার চাঞ্চল্য। ফাস্ট সেমিস্টারের একটা মেয়ে তার সিনিয়রের
সাথে এতো অবলীলায় কথা বলছে যেটা অবাক হওয়ার মত।
-কি ব্যাপার? আপনি কি
সবসময়ই এমন আনমনা হয়ে থাকেন?
আবার ও তার কথায়
স্তম্ভিত ফিরে পেলাম।
-না মানে... তোমাকে
আগে দেখিনি তো...।
আমার কথা শুনে মেয়েটা
একটু অভিমানী গলায় বললো , কেন আপনি অপরিচিতদের সাথে কথা বলেন না? আর আমি অপরিচিত হতে
যাবো কেন? আমি তো আপনার ডিপার্টমেন্টেরই। আমাকে একটু হেল্প করা লাগবে। যদিও আমি
কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তি হয়েছি, আমি কিন্তু কম্পিউটার খুব ভালো বুঝি না। রান্নার
রেসিপি নিয়ে আমি একটা ব্লগ করতে চাচ্ছি। আপনি আমাকে ওয়েবপেজটা ডিজাইন করে দিবেন।
আবদারের সুরে মেয়েটার
কথাগুলো আমার কাছে কেমন জানি লাগতেছিলো!
এমন সুন্দরী একটা
মেয়েকে না করে দিতে মন সায় দিচ্ছিলো না।
আমি হেসে জিজ্ঞেস
করলাম, তুমি কি ভালো রান্না করতে জানো?
-আমার কাছে খুব ভালো
মনে হয়না, তবে এখন পর্যন্ত যারাই আমার রান্না খেয়েছে তারাই প্রশংসা করেছে। তাছাড়া আমি
অনেক পদের রান্না পারি। আপনার প্রিয় গরুর মাংশের বিরিয়ানীটা আমি খুব ভালো পারি।
সেইজন্য আজকে আমি আপনার জন্য গরুর মাংশের বিরিয়ানী রান্না করে নিয়ে আসছি। দুপুরে
কেন্টিনে অবশ্যই আমার সাথে খাবেন।
আমি অসম্ভব রকম
বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কিভাবে জানো গরুর মাংশের বিরিয়ানী আমার প্রিয়?
-কেন!! একটু বৃষ্টি
হলেই তো আপনার বিরিয়ানী সংক্রান্ত পোস্ট ফেসবুকে মৌ মৌ গন্ধ ছড়ায়।
-তুমি আমার সাথে
ফেসবুকে এড আছো বলেতো মনে হয়না। অর্পিতা নামের কাউকে তো আমি ফেসবুকে এড করিনি।
-করেছেন, কারন আমার
ফেসবুক নেইম অর্পিতা না, “মেঘবালিকা”। এতো কথা না বলে চলুন তো কেন্টিনে বসি। আপনি
নিজেই খেয়ে দেখবেন, রান্না কেমন। তারপর যদি বলেন যে, রান্না ভালো হয়েছে তাহলেই আমি
ব্লগে লিখবো, নতুবা ব্লগ খোলার ও দরকার নেই। লেখার ও দরকার নেই।
-মেয়েদের সাথে খুব
বেশী চলাচল নেই বলেই হয়তো আমি এতো অবাক হচ্ছি, একটা অপরিচিত মেয়ে কিভাবে এতো সহজে
আমার সাথে এতো সহজ আচরন করছে! আমি তো মেয়েদের সাথে তেমন কথাই বলি না। যত যাই হোক,
বিরিয়ানীর কথাটা শুনার পর কেমন যানি ক্ষিদেটা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। কেন্টিনে গিয়ে কোনার দিককার টেবিলটায় বসলাম দুজনে।
অর্পিতা হটপট থেকে যখন
বিরিয়ানীর বাটীটা আমার সামনে রাখলো, তখন মনে হয় আমার মাথা আর কাজ করছিলো না।
বাইরের দুনিয়ার কোন কিছুই আর আমার চিন্তার মধ্যে ছিলনা। সমস্ত আকর্ষণ বিরিয়ানীর
বাটিতে। আমি প্রায় উপুড় হয়ে বিরিয়ানির বাটির উপর পড়লাম আর গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম
বিরিয়ানী। কিন্তু হটাথ মনে হল কে জানি পিঠে আঘাত করছে। একেবারে অনিচ্ছা স্বর্তে তাকাতে
চেষ্টা করলাম, কিন্তু কাজ হচ্ছে না, আমি তাকাতে পারলাম না। এইবার আরো জোরে আঘাত
লাগলো, আর ঠিক তখনি ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধু আমাকে লাথি দিয়ে
জাগিয়ে দিয়েছে। আর খুব রাগ দেখিয়ে বলছে, শালা... বালিশের তুলা কি সব খেয়ে ফেলবি?
মনে হয় তোর বাপের জন্মে ও কিছু খাস নাই। ক্লাসের আর ১৮ মিনিট বাকী আছে।তুই যাবি
নাকি আমি একাই চলে যাবো?
সেদিন তাকে আমি
জিজ্ঞেস করেছিলাম , দোস্ত, ফাস্ট সেমিস্টারে অর্পিতা নামে কোন মেয়ে ভর্তি হয়েছে
নাকি?
Post a Comment
0 comments
Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.