Image

Image

0



আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বে ১০০ বিলিয়নের উপর ছায়াপথ (Galaxy) আছে। প্রত্যেক ছায়াপথে আছে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি নক্ষত্র, গ্যালাকটিক জায়ান্ট মেঘমালা, কসমিক ধূলিকণা এবং গোণার সক্ষমতার বাইরে গ্রহ-উপগ্রহ। এছাড়াও আছে নক্ষত্র হতে নিঃসৃত আলো, এক্স-রে, গামা-রে সহ জানা অজানা অনেক রশ্মি যা প্রত্যক্ষ সকল শক্তির উৎস

তবু মানবসৃষ্ট সকল যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যা দেখি (এটমিক ইউনিভার্স) তা প্রকৃত পক্ষে পুরো ইউনিভার্সের মাত্র ভাগ (.%) আমরা চোখ বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ১৩. আলোকবর্ষ বিস্তৃত মহাবিশ্বের মাত্র ভাগ (সূত্র ) দেখতে পাই। আর বাকি অংশ? বাকি অংশের ২১% বা ২৭% ডার্ক ম্যাটার (সূত্র ) আর ৭৪% বা ৬৮% ডার্ক এনার্জি (সূত্র ) একটা কমন প্রশ্ন আছে সকলেরই মনে মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে নাকি সংকুচিত হচ্ছে?? অনন্তকাল ধরে প্রসারিত হতে থাকবে নাকি একসময় সংকুচিত হতে হতে পূর্বের বিং ব্যাঙে ফিরে যাবে?



৯০ দশকের প্রথমদিক পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন যে মহাবিশ্বের যে পরিমাণ বস্তু বা পদার্থ আছে তার ভর মহাবিশ্বকে সংকুচিত করবার জন্য যথেষ্ট এবং যে পরিমাণ শক্তি আছে তার মহাবিশ্বকে অনন্তকাল ধরে প্রসারিত করবার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, মহাবিশ্বের বস্তুসমূহের মোট যে গ্রাভিটি বা মহাকর্ষীয় বল, তা একসময় মহাবিশ্বকে সংকুচিত করতে বাধ্য। কারণ মহাকর্ষের সূত্র অনুসারে মহাবিশ্বের সকল বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করছে

কিন্তু ১৯৯৮ সালে সকলকে চমকে দেয় হাব্ টেলিস্কোপে ধরা পড়া একটি সুপারনোভার বিস্ফোরণ (সূত্র ) এই বিস্ফোরণের প্রকৃতি নির্ণয় করতে গিয়ে ধরা পড়লো যে মহাবিশ্ব পূর্বের তুলনায় আরো বেশি গতিতে প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ যেখানে বিগ ব্যাঙের ফলে উদ্ভূত শক্তি ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি মন্থর হয়ে যাবার কথা তার বদলে মহাবিশ্ব প্রতি মুহূর্তে বাড়তে থাকা গতিতে প্রসারিত (Expanding with acceleration) হচ্ছে যা প্রায় শত বছরের পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণের ফলাফলকে ভুল প্রমাণিত করে দেয়। কেউ এটা আশা করেনি। এবং কারোরই এর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছিলো না

তাত্ত্বিক জ্যোতিঃপদার্থবিদেরা (Theoretical Astrophysicist) এর ৩টা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা প্রস্তাব করেছে (সূত্র ) কিন্তু তিনটি থিওরির কোনোটাই এককভাবে মহাবিশ্বের ত্বরান্বিত প্রসারণকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারেনি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার একমাত্র সমাধানের একটা নাম দিয়েছে - ডার্ক এনার্জি

 ডার্ক এনার্জি


ডার্ক এনার্জিকে (সতর্ক করে দিচ্ছি যে ডার্ক এনার্জি আর ডার্ক ম্যাটার এক বস্তু না।) এক কথায় বলা যায় শূন্যস্থানের (Vacuum) একমাত্র (এখনও পর্যন্ত একমাত্র) উপাদান। সকলেই মনে করে, মহাকাশ বা আউটার স্পেসে শুধুই শূন্যতা (Vaccum) এবং পৃথিবীর সকল পদার্থ বিজ্ঞানীদের কাছেও তাই ছিলো। যতদিন না ডার্ক এনার্জি আবিষ্কৃত হয়

যেখানে ডার্ক ম্যাটার আকর্ষণ করে, ডার্ক এনার্জি বিকর্ষণ করে। ডার্ক ম্যাটারের প্রভাব দেখা যায় গ্যালাকটিক লেভেল যেখানে ডার্ক এনার্জির প্রভাব পড়ে সমগ্র মহাবিশ্বের উপর। গ্যালাক্সির মত ক্ষুদ্র বস্তুর (পুরো মহাবিশ্বের কাছে গ্যালাক্সি ক্ষুদ্র বস্তুই বটে) উপর বা জাগতিক কোন বস্তুর ডার্ক এনার্জির কোন প্রভাব নেই। আছে শুধু মহাবিশ্বের উপর

মহাবিশ্বের বয়স ১৩. বিলিয়ন বছর। প্রথমার্ধে (. বিলিয়ন বছর পর্যন্ত) এই মহাবিশ্ব একটা নির্দিষ্ট গতিতে প্রসারিত হচ্ছিলো। তারপর থেকে কোত্থেকে এক রহস্যময় শক্তির ধাক্কায় মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি বাড়তে থাকে এবং এখনও পর্যন্ত তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেক্ষেত্রে অনেকটা ধারণা করা হচ্ছে যে মহাবিশ্ব সৃষ্টির . বিলিয়ন বছর পর ডার্ক এনার্জির উদ্ভব হয়েছে হঠাৎ করে। তার আগে যেন এর কোনো হদিস ছিলো না

ডার্ক এনার্জি নিয়ে যা জানি আমরা তার চাইতে বহুগুণ অজানা। কিন্তু আমরা জানি কতটা (৭৪ - ৬৮%) ডার্ক এনার্জি আছে কারণ মহাবিশ্বের উপর এর প্রভাব প্রত্যক্ষ। কিন্তু এই একটা জিনিসই শুধু মোটামুটি নিশ্চিতভাবে জানা গেছে। এছাড়া বাকী সবই অজানা রহস্য। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ রহস্য


 ডার্ক ম্যাটার


ডার্ক ম্যাটার হল সেই সকল বস্তু যা মহাবিশ্বের ২৭ ভাগ (আরেক হিসেবে ২১ ভাগ) দখল করে আছে। ডার্ক এনার্জি শুধুই শক্তি, কিন্তু ডার্ক ম্যাচটার হল বস্তু। কিন্তু রহস্যময় বস্তু যা দেখা যায় না, আলোক শোষণ বা বিচ্ছুরণ করে না, তেজস্ক্রিয়তা প্রদর্শন করে না। ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় গ্যালাকটিক লেভেলে এর মহাকর্ষ বলের প্রভাব দ্বারা। ডার্ক ম্যাটারের প্রভাবে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের নিকটবর্তী বা গ্যালাক্সির একদম শেষপ্রান্তের নক্ষত্রগুলো একই গতিতে গ্যালাক্সিকে প্রদক্ষিণ করেনা। ডার্ক এনার্জির বল একটা ভারসাম্য বজায় রাখে নক্ষত্রের গতিতে। তা না হলে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের ব্লাক হোলের নিকটবর্তী নক্ষত্রগুলো এত তীব্র গতিতে গ্যালাক্সিকে প্রদক্ষিণ করতো যে তে তাদের আয়ুকাল অতি দ্রুত শেষ হয়ে যেত।    

 শূন্যস্থান আসলে শূন্য নয়


আলবার্ট আইনস্টাইন প্রথম প্রস্তাব দেন যে শূন্যস্থান আসলে শূন্য নয়। এর একটা অতি চমকপ্রদ উপাদান আছে। এই উপাদান হল শক্তি এবং সেই শক্তিই ডার্ক এনার্জি (পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে আবিষ্কৃত) এমনই চমকপ্রদ এর বৈশিষ্ট্য যে - শূন্যস্থান যতই বৃদ্ধি পাবে, সেই শূন্যতা ডার্ক এনার্জি দিয়ে পরিপূর্ণ থাকবে। এবং শূন্যতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডার্ক এনার্জির ঘনত্ব কখনই কমবে না। কারণ শূন্যস্থান তো ডার্ক এনার্জি দিয়েই গঠিত হচ্ছে। অনেকটা মানবদেহ বয়সের সাথে সাথে বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং দেহের হাড়-মাংস-রক্ত সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়

ডার্ক এনার্জির যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এখন পর্যন্ত জানা গেছে, তা হলো - এটি একটি বিকর্ষণকারী শক্তি বা Repulsive Force এটার নেগেটিভ প্রেশার বা উল্টো চাপ আছে। যদি পজিটিভ প্রেশার বা নরমাল প্রেশার কোনো বস্তুকে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করে, ডার্ক এনার্জি কেন্দ্র থেকে বহির্মুখী করার চেষ্টা করে। নরমাল প্রেশার প্রয়োগে কোন ফোমের বল ছোট হয়ে কেন্দ্রের দিকে ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে। উল্টো ভাবে নেগেটিভ প্রেশার প্রয়োগে ফোমের বল বাইরের দিকে স্ফীত হবে। পার্থক্য একটাই, এই নেগেটিভ প্রেশার কোন দৃশ্যমান বস্তুকে প্রভাবিত করে না (এবং এই বৈশিষ্ট্যই আইন্সটাইনের গ্র্যাভিটির থিওরিকে আংশিক ভুল প্রমাণিত করে) সেক্ষেত্রে মহাকর্ষের নতুন একটা থিওরির প্রয়োজন, সাধারণ বস্তুর উপর ডার্ক এনার্জির প্রভাবহীনতা ব্যাখ্যা করতে

ডার্ক এনার্জির এই বৈশিষ্ট্যই আমাদের মহাবিশ্বের প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা গতিকে ব্যাখ্যা করে। যেখানে মহাকর্ষীয় বল কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে (Inward pull) সেখানে ডার্ক এনার্জি বাইরের দিকে ঠেলে দেয় (Outward push) ডার্ক এনার্জিই মহাবিশ্বের ৭৪% দখল করে আছে। এই ডার্ক এনার্জিই নরমাল ম্যাটার এবং ডার্ক ম্যাটারের সম্মিলিত ভরের (মহাবিশ্বের ২৬% ভর) মহাকর্ষীয় বলকে নাকচ করে দিয়ে মহাবিশ্বের অবশ্যম্ভাবী সংকোচন প্রতিরোধ করছে

কোনটি সঠিক? ডার্ক এনার্জি শূন্যস্থানের উপাদান? এনার্জি ফ্লুয়িড? গ্রাভিটির নতুন থিওরি? ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী থিওরি আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে কোনোটিই প্রমাণিত নয়। কিন্তু প্রমাণ কি খুবই জরুরি? এক রহস্য সমাধান হলে দেখা যাবে, আরেক রহস্য এসেছে। এভাবেই চলতে থাকুক। যতটুকু জানা সম্ভব, সেটা জানতে চাওয়ার এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করার চর্চাই তো বিজ্ঞান!



 মূল লেখকঃ ইমরান নূর 

Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.