Image

Image

0
life story of philosopher of Aristotol.



বিশ্ববিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডার দুঃখ করে বলেছিলেন, জয় করাবার জন্য পৃথিবীর আর কোন দেশই বাকি রইল না। তাঁর শিক্ষক মহাপন্ডিত এ্যারিষ্টটল সমন্ধেও একই কথা প্রয়োজ্য। জ্ঞানের এমন কোন দিক নেই, তিনি যার পথপ্রদর্শক নন। তাঁর Politics গ্রন্থে তিনি নাট্যতত্ব ও কাব্যতত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। আধুনিক জীববিজ্ঞানের জনক তিনি। তিনি বহু দার্শনিক তত্বের প্রবক্তা। তাঁর চিন্তা জ্ঞান মনীষা প্রায় দুই হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতাকে বিকশিত করেছিল।
এরিষ্টটল ৩৮৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসিডনিয়ার নিকটবর্তী স্ট্যাগিরা নামক স্থানে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা নিকোম্যাকাস ছিলেন মেসিডনিয়ার রাজ দরবারের একজন চিকিৎসক। শৈশবে ঘরেই পড়াশোনা করেন এ্যারিস্টটল। ১৭ বছর বয়সে পিতা-মাতাকে হারিযে গৃহত্যাগ করেন।
৩৬৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১৮ বছর বয়সে তিনি এথেন্স যান এবং প্লেটোর ‘একাডেমিতে’ পড়াশোনা শুরু করেন। সেই সময় এথেন্স ছিল শিক্ষার কেন্দ্র। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গড়ে তুলেছেন নতুন এ্যাকাডেমি। সেখানে ভর্তি হলেন এ্যারিস্টটল। অল্প দিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় তিনি হয়ে উঠলেন এ্যাকাডেমির সেরা ছাত্র। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। প্লেটোর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ বিশ বৎসর তিনি প্লেটোর একাডেমিতে শিক্ষা লাভ করেন। এরপর এথেন্স নগরী ত্যাগ করে এশিয়া মাইনরে চলে যান।
শিক্ষাদান ছাড়াও নানান বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করতেন এ্যরিস্টটল। তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, প্রকৃতিবিজ্ঞন, জীববিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর গভীর জ্ঞান, অসাধারণ পান্ডিত্যের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপেরও অজ্ঞত ছিল না। পুত্র আলেকজান্ডারের জন্ম সময়েই তাঁর শিক্ষার ভার অর্পণ করেন এ্যরিস্টটলের উপর। তখন এ্যারিস্টটল আটাশ বছরের যুবক। আলেকজান্ডার যখন তেরো বছরের কিশোর, রাজা ফিলিপের আমন্ত্রণে এ্যারিস্টটল এসে তাঁর শিক্ষার ভার গ্রহণ করলেন। শ্রেষ্ঠ গুরুর দিগ্বিজয়ী ছাত্র। বহু প্রাচীন ঐতিহাসিকের ধারণা এরিস্টটলের শিক্ষা উপদেশই আলেকজান্ডারে অদম্য মনোবল আর লৌহকঠিন দৃঢ় চরিত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। প্রকৃতপক্ষে একজনের ছিল সমগ্র পৃথিবীকে জয় করে তার উপর প্রভুত্ব করবার প্রবল ইচ্ছা। অন্য জনের ছিল জ্ঞানের নতুন নতুন জগৎ অাবিস্কার করে মানুষের জন্য তাকে চালিত করার ইচ্ছা। এ্যরিস্টটলের প্রতি রাজা ফিলিপেরও ছিল গভীর শ্রদ্ধা। শুধু পুত্রের শিক্ষক হিসেবে নয়, যথার্থ জ্ঞানী হিসেবেও তাকে সম্মান করতেন। এ্যারিস্টটলের জন্মস্থান স্তাজেইরা কিছু দুর্বৃত্তের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেখানকার বহু মানুষ বন্দি জীবনযাপন করছিল। রাজা ফিলিপ এ্যারিস্টটলের ইচ্ছায় শত্রু সেটার হাত থেকে শুধু স্তাজেইরা উদ্ধার করেননি, ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে শহরকে নতুন করে গড়ে তুললেন।
এ্যারিস্টটল একদিকে ছিলেনে উচ্চমানের জ্ঞানী, অন্যদিকে সার্থক শিক্ষক। তাই গুরুর প্রতি আলেকজান্ডারের ছিল অসীম শ্রদ্ধা। তিনি বলতেন, “পিতার কাছে পেয়েছি আমার এই জীবন, আর গুরুর কাছে শিক্ষলাভ করেছি; কী ভাবে এ জীবনকে সার্থক করা যায় তার জ্ঞান।” এ্যারিস্টটল যখন জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার কাজ করছিলেন আলেকজান্ডার তাঁর সাহায্যের জন্য বহু মানুষকে নিযুক্ত করেছিলেন, যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন মাছ, পাখি, জীবজন্তুর জীবন পর্যবেক্ষণ করা, তার বিবরণ সংগ্রহ করে পাঠানো। দেশ-বিদেশের যেখানেই কোন পুঁথি পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যেত, আলেকজান্ডার যে কোন মূল্যেই হোক পুঁথি পান্ডলিপি সংগ্রহ করে গুরুর হাতে তুলে দিতেন।
আলেকজান্ডার যখন এশিয়া জয়ের নেশায় সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হলেন, এ্যারিস্টটল ফিরে গেলেন এথেন্সে। তখন এথেন্স ছিল শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষার পীঠস্থান। এখানেই স্কুল স্থাপন করলেন এ্যরিস্টটল। তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর। ৩৩৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এরিষ্টটল তার নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘লাইসিয়াম’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই লাইসিয়ামে সাধারনত বাস্তব গবেষনার উপর জোর দেয়া হত। বস্তত ঞ্জান ও গবেষনার সংগঠক এরিষ্টটল দস্তুর মত একটি জীব গবেষনাগার তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার পরিচয় লাভের জন্য এরিষ্টটল ১৫৮ টি রাষ্টের সংবিধান ও শাসন ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে সংবিধানের একটি গ্রন্থাগারও তার লাইসিয়ামে গড়ে তোলেন।
আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যু হল। এতদিন বীর ছাত্রের ছত্রছায়ায় যে জীবন যাপন করতেন, তাতে বিপর্যয় নেমে এল। কয়েকজন অনুগত ছাত্রের কাছ থেকে সংবাদ পেলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সক্রেটিসের অন্তিম পরিণতির কথা অজানা ছিল না এ্যারিস্টটলের। তাই গোপনে এথেন্স ত্যাগ করে ইউরিয়া দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু এ স্বেচ্ছানির্বাসনের যন্ত্রণা বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি এরিস্টটলকে। ৩২২ খ্রিস্টপূর্বে ৬২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ্যরিস্টটল সমস্ত জীবন ধরে যে সমস্ত রচনা করে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগে তা তাঁর শিষ্য থিওফ্রাস্তাসের হাতে দিয়ে যান। থ্রিওফ্রাস্তাসের পর সেই সমস্ত রচনাবলির উত্তরাধিকারী হন তাঁর শিষ্য নেলেওস। নেওলসের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্ররা সেই সমস্ত রচনাবলিকে লোহার সিন্দুকে পুরে এ্র্যারিস্টটলের সমাধির নিচে পুঁতে রাখেন। দুশো বছর পর রোমের সেনাবাহিনী যখন গ্রিস দখল করে তখন সেই পুঁধি উদ্ধার করে রোমে নিয়ে আসা হল। সমস্ত রচনাই জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বহু প্রচেষ্টায় সে সমস্ত পুঁথির অনুলিপি প্রস্তুত করা হয় এবং তার ভিত্তিতেই এ্যারিস্টটলের রচনাবলি প্রকাশিত হয়।
বিষয়বস্তুর নিরিখে এ্যারিস্টটলের রচনাবলিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, অলংকারতত্ব, কাব্যত্ব। এ্যরিষ্টটলের রচনার সংখ্যা এ হাজারের কাছাকাছি। তবে এর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। সমান্য যা কিছু পাওয়া গেছে তা থেকেই অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, কি ব্যাপক ছিল তাঁর প্রতিভা। ভুল-ত্রুটি থাকা সত্বেও তিনিই প্রথম মানুষের কাছে জ্ঞানের মশালকে তুলে ধরেন।
এ্যারিস্টটলের রচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল মেটাফিজিক্স (অধিবিদ্যা) এবং এথিক্স (নীতিশাস্ত্র)। এই বইগুলির মধ্যে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন, জীবন গতিশীল এবং ক্রমাগতই তার বিকাশ ঘটছে। এই সমস্ত রচনার মধ্যে অনেক নির্ভুল তত্ত্ব থাকলেও জ্যোতিবির্জ্ঞান ও পদার্থ বিদ্যার ক্ষেত্রে যুক্তির চেয়ে কল্পনার ও অযৌক্তিক ধারণার প্রভাবই বেশি। এর কারণ কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তিনি এই সব বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। যেমন তিনি বলতেন, যদি একই সাথে একটি ভারি ও হালকা বস্তুকে উপর থেকে ফেলা হয় তবে ভারী বস্তুটি আগে পড়েবে। বহু শত বছর পর গ্যালিলিও প্রমাণ করলেন (পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে) দুটি বস্তুই একই সাথে মাটিতে পড়ব্ এছাড়া তিনি বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই স্থির। তাকে গতিশলি করবার জন্য বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।
জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্র্রেও এ্যরিস্টটলের আধিকাংশ মতামতই ছিল ভ্রান্ত। এ্যরিস্টটল লিখেছিলেন পৃথিবী স্থির। তাকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের চাঁদ, তারা, সূর্য জ্যমিতিক পথে ঘুরছে। গ্যালিলিও প্রথমে এই ধারণাকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেন। তাঁর অভিমত ছিল, চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। উত্তরকালে প্রমাণিত হয়েছে-চাঁদের কোন আলো নেই।
তাঁর এসব ভ্রান্ত মতামত কয়েক শতাব্দী ধরে সমাজকে চালিত করেছে। তার জন্য এ্র্যরিস্টটলকে অভিযুক্ত করা যায় না। উত্তরকালের মানুষেরই দায়িত্ব ছিল তাঁর গবেষণার সঠিক মূল্যায়ন করা। কিন্তু সে কাজে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। এ সমস্ত ভ্রান্তি থাকার সত্বেও এ্যরিস্টটল মানব ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠতম প্রাজ্ঞ-যার সৃষ্ট জ্ঞানের আলোয় মানুষ নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, মহত্তর পর্যায়ে উন্নত করেছে।


Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.